ছোট্ট বন্ধুরা সবাই নিশ্চই ভাল আছো। আজ তোমাদের সমাজ বইএর ১ম অধ্যায়ের কিছু প্রশ্ন উত্তর তুলে ধরবো। তোমাদের লেখা পড়া কেমন চলছে। আবশ্যই আমাকে জানাবা। তোমার ভাল থাকবে ভাল করে পরবে এটাই আমার কামনা। তাহলে আর কথা না বারিয়ে আলোচনায় যায়।
প্রথম অধ্যায় (এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড)
১. প্রশ্ন : তোমার এলাকার পাঁচটি উন্নয়ন কর্মকান্ডের নাম লিখ।
উত্তর : আমার এলাকার পাঁচটি উন্নয়ন কর্মকান্ডের নাম : সুস্থ, সুন্দর ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য নিজ এলাকার উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। আমাদের এলাকার পাঁচটি উন্নয়ন কর্মকান্ডের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো-
ক) রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কার ও সংরক্ষণ করা।
খ) পুল, সাঁকো, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ, সংস্কার ও সংরক্ষণ করা।
গ) গাছ লাগানো, পরিচর্যা করা এবং সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করা।
ঘ) এলাকার পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
ঙ) ঝোঁপঝাড়, পুকুরের কচুরিপানা ও ড্রেন পরিস্কার করে মশা নিধনের ব্যবস্থা করা।
উল্লেখিত কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করা সম্ভব।
২. প্রশ্ন : এলাকার রাস্তাঘাট ভালো না হলে কী অসুবিধা হতে পারে?
উত্তর : আমরা সারাদিন কেউ নিজগৃহে অবস্থান করি না। আমাদেরকে নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। তাই রাস্তাঘাট ভালো হলে আমাদের অনেক সুবিধা হয়। আর রাস্তাঘাট ভালো না হলে নিচে উল্লেখিত অসুবিধাসমূহ হতে পারে :
ক) আমাদের চলাচলে অসুবিধা হবে।
খ) মালামাল পরিবহনে বিঘ্ন ঘটবে।
গ) ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হবে না। ফলে আয় রোজগার বাড়বে না।
ঘ) সর্বোপরি আমাদের বসবাসের জন্য অসুবিধা হবে। যেমন- সহজে অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে, হাসপাতালে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে অসুবিধা হবে।
এলাকার রাস্তাঘাট ভালো না হলে উল্লেখিত অসুবিধা ছাড়াও নানা ধরনের অসুবিধা হতে পারে। তাই এ ধরনের অসুবিধা এড়ানোর জন্য আমরা আমাদের নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাট, সাঁকো, সেতু ইত্যাদি যত্ন নেব।
৩. প্রশ্ন : এলাকায় বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করা উচিত কেন?
উত্তর : এলাকায় বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করা উচিত, কারণ : সুন্দর, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিবেশ। পরিবেশের অন্যতম উপাদান হচ্ছে গাছ বা বৃক্ষ।
এলাকায় বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করার প্রয়োজনীয়তা নিচে তুলে ধরা হলো –
ক) বেঁচে থাকার জন্য : বৃক্ষ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আমরা বৃক্ষ থেকে পেয়ে থাকি।
খ) জীবনধারণের জন্য : জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান, যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতি বৃক্ষ থেকে পাই।
গ) ওষুধ তৈরি : আমাদের জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় ওষুধও বৃক্ষ থেকে পেয়ে থাকি।
ঘ) মাটির ক্ষয়রোধ : বৃক্ষ মাটির ক্ষয়রোধ করে।
ঙ) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় : প্রয়োজনীয় গাছ পালার অভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বৃক্ষ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
পরিশেষে বলা যায় গাছপালা পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উপরিউক্ত কারণে, এলাকায় বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করা উচিত।
৪. প্রশ্ন : এলাকাবাসীকে নিরাপদ পানি ব্যবহারে সচেতন করা প্রয়োজন কেন?
উত্তর : এলাকাবাসীকে নিরাপদ পানি ব্যবহারে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা : পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া কোনো জীব বাঁচতে পারে না। আর বাঁচার জন্য চাই নিরাপদ পানি। যে পানি পান বা ব্যবহারে স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না তাকে আমরা নিরাপদ পানি বলি। এলাকাবাসীকে নিরাপদ পানি ব্যবহারে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা নিচে আলোচনা করা হলো –
ক) পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে : নিরাপদ পানির অভাবে বিভিন্ন রকম পানিবাহিত রোগ যেমন – আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এসব পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসীকে নিরাপদ পানি ব্যবহারে সচেতন করা প্রয়োজন।
খ) চর্মরোগ থেকে রক্ষা পেতে : আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকার পানিতে আর্সেনিক দূষণ দেখা দিয়েছে। আর্সেনিক এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যা মাটির নিচে থাকে এবং পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করে। আর্সেনিকযুক্ত পানি দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে হাত ও পায়ের তালুতে এক ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। অতএব এ ব্যাপারে এলাকার লোকজনকে সচেতন করতে হবে।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নিরাপদ পানির অভাবে আমাদের নানা ধরনের রোগ হতে পারে। তাই এলাকাবাসীকে নিরাপদ পানি ব্যবহারে সচেতন করে তুলতে হবে।
৫. প্রশ্ন : এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলের দায়িত্ব কী?
উত্তর : এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলের দায়িত্ব : আমাদের বসবাসের এলাকা যদি উন্নত না হয়, জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো যদি সেখানে না থাকে অথবা খারাপ অবস্থায় থাকে তাহলে আমাদের অনেক অসুবিধা হয়। তাই এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলের কিছু কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে। এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলের পালন করা উচিত এমন কিছু দায়িত্ব নিচে তুলে ধরা হলো –
ক) আমাদের চলাচলের রাস্তা যদি ভাঙা হয়, এতে যদি গর্ত থাকে তাহলে আমাদের সকলের উচিত রাস্তা মেরামত করা এবং গর্ত ভরাট করা।
খ) আমাদের চলাচলের রাস্তায় যদি ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকে তবে আমাদের উচিত ঢাকনার ব্যবস্থা করা নতুবা মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
গ) পুল, সাঁকো, সেতু, কালভার্ট ইত্যাদি নষ্ট থাকলে এগুলো ঠিক করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঘ) গাছ লাগাতে হবে, পরিচর্যা করতে হবে এবং সামাজিক বনায়নে আগ্রহী হতে হবে।
ঙ) পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
চ) নিরাপদ পানি পান ও ব্যবহার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
ছ) খাল খনন করে পানি নিষ্কাশন ও সংরক্ষণের সুব্যবস্থা করতে হবে।
জ) নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
ঝ) বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড গ্রহণ করতে হবে।
৬. প্রশ্ন : তোমার এলাকায় কিছু লোকের হাত ও পায়ের তালুতে চর্মরোগ দেখা যাচ্ছে – তোমার কী করা উচিত? সে সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : হাত ও পায়ের তালুতে এক ধরনের চর্মরোগ হওয়া মানেই আর্সেনিক আক্রান্ত হওয়া। আমাদের দেশে কোনো কোনো এলাকার পানিতে আর্সেনিক দূষণ দেখা দিয়েছে। আর্সেনিক এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ যা মাটির নিচে থাকে। এটা পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করে। এ পানি নলকূপের মাধ্যমে উপরে উঠে আসে। এই আর্সেনিকযুক্ত পানি দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে হাত ও পায়ের তালুতে এক ধরনের চর্মরোগ হয়। এ রোগ পরবর্তীতে ক্যান্সার রূপ নিতে পারে।
আমার যা করা উচিত : আর্সেনিক এর মতো ভয়াবহ রোগ দেখা দিলে আমার যা করণীয় তা নিম্নরূপ :
ক) আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলো চিহ্নিত করার জন্য সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বেসরকারি সংস্থাকে জানাব।
খ) আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলো লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করব এবং এ ধরনের নলকূপ থেকে পানি পান করা থেকে এলাকাবাসিকে বিরত রাখব।
গ) আর্সেনিকযুক্ত পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য এলাকাবাসিকে সচেতন করে তুলব।
ঘ) এলাকাবাসিকে আর্সেনিকমুক্ত নলকূপের পানি পান করতে বলব। সর্বোপরি, যদি আমার এলাকার লোকজনের হাত ও পায়ের তালুতে চর্মরোগ দেখা যায় তাহলে আর্সেনিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে এলাকার সবাইকে অবহিত করব।
আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভাল থাকবে। কিছু যানার থাকলে আমাকে কমেন্ট করে যানাবে। আল্লাহ হাফেজ......