সকল পোষ্ট গুলো এখানে
আমাদের লোকশিল্প
লেকচার – ১
লেকচার – ১
অধ্যায়টির রচনা পরিচিতি :-
উত্স: ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধটি পটুয়া কামরুল হাসান রচিত ‘আমাদের লোককৃষ্টি’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
মূলবক্তব্য : আমাদের অধিকাংশ লোকশিল্পই আজ বিলুপ্তির পথে। পূর্বে আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকশিল্পের দ্রব্য তৈরি হতো তার অনেকগুলোই অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল।ঢাকাই মসলিন তার অন্যতম। ঢাকাই মসলিন অধুনা বিলুপ্ত হলেও জামদানি শাড়ি অনেকাংশে সে স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত এবং আমাদের গর্বের বস্তু। নকশিকাঁথা আমাদের আরেকটি গ্রামিণ লোকশিল্প। এ শিল্প আজ লুপ্তপ্রায় হলেও কিছু কিছু নমুনা এখনো পাওয়া যায়। আপন পরিবেশ থেকেই মেয়েরা তাদের মনের মতো করে কাঁথা সেলাইয়ের অনুপ্রেরণা পেত। কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক একটি পরিবারের কাহিনি, তাদের পরিবেশ, তাদে জীবনগাথা। আমাদের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ছাড়াও পোড়ামাটি দিয়ে নানা প্রকার শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে থাকে। নানা প্রকার পুতুল, মূর্তি ও আধুনিক রুচির ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট ইত্যাদি তারা গড়ে থাকে। খুলনার মাদুর ও সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত। আমাদের দেশের এই যে লোকশিল্প তা সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমরা আমাদের লোকশিল্পের মাধ্যমে নিজস্ব ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি।
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর : এখন অনুশীলনীর প্রশ্ন-উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। সবাই প্রস্তুত তো......
১. প্রশ্ন : পলাশপুর গ্রামের রহিমা। দরিদ্র হলেও শিল্পী মনের অধিকারী। ছোটবেলা থেকেই সে বাঁশ, বেত দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস তৈরি করতো। কিন্তু অচমকা একদিন তার স্বামী মারা গেলে দুই সন্তান নিয়ে পথে বসে রহিমা। উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে সুঁই-সুতা হাতে তুলে নেয় সে। তার সুখ-দুঃখের জীবনালেখ্য রহিমার দীঘল সুতার টানে ভাষা দিতে থাকে। একদিন বেসরকারি একটি সংস্থার মাধ্যমে তার সুচিশিল্পগুলো যায় বিদেশে এবং মোটা অঙ্কের অর্থ প্রাপ্তির পাশাপাশি প্রচুর সুনাম অর্জন করে।
ক) কোন এলাকার মাদুর সকলের কাছে পরিচিত ?
খ) ‘ঢাকাই মসলিনের কদর ছিল দুনিয়া জুরে’ বলতে কী বোঝায় ?
গ) স্বামীর মৃত্যুর পর রহিমা কাজটি ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের কিসে প্রতিনিধিত্ব করে ? বর্ণনা কর।
ঘ) দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রহিমার অবদান ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর :
ক) উত্তর : খুলনার মাদুর সকলের কাছে পরিচিত।
খ) উত্তর : উচ্চমান ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণে ঢাকাই মসলিন এককালে দুনিয়া জুড়ে কদর লাভ করেছিল।
ঢাকাই মসলিন আমাদের লোকশিল্পের এক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী উপাদান। কারিগরি দক্ষতা ও শিল্পী মনের মিলন ঘটিয়ে অতি সূক্ষ্ণভাবে এটি তৈরি করা হত। ছোট একটি আংটির ভেতর দিয়ে কয়েকশ গজ মসলিন কাপড় অনায়াসে প্রবেশ করানো যেত। এ অসাধারণ বৈশিষ্ট্যর কারণেই দুনিয়াজোড়া তার কদর ছিল।
গ) উত্তর : উদ্দীপকের রহিমার কাজটি আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধে উল্লেখিত নকশি কাঁথা তৈরির ঐতিহ্যের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।
কামরুল হাসান রচিত ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে নকশি কাঁথার কথা বলা হয়েছে। বাংলার বৈচিত্র্যময় লোকশিল্পের অন্যতম নিদর্শন নকশি কাঁথা। গ্রামীণ নারীরা সাধারণত বর্ষাকালে এসব কাঁথা সেলাই করে । আপন পরিবেশ ও জীবনের গল্পকেই তারা সূঁই সুতোর সাহায্যে নকশার রূপ দেয়।
উদ্দীপকের রহিমাও জীবিকার তাগিদে নকশি কাঁথা তৈরি করে। প্রবন্ধের বর্ণনার মতই নিজের জীবনের কাহিনিকেই সে সূঁই-সুতোর সাহায্যে কাঁথায় আঁকতে শুরু করে। রহিমা দরিদ্র হলেও শিল্পীমনের অধিকারী বলে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর সে বাঁচার অবলম্বন হিসেবে সুঁই-সুতো হাতে তুলে নেয়। একসময় অর্থের পাশাপাশি এসব নকশিকাঁথা তাকে যথেষ্ট সুনামও এনে দেয়। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে নকশি কাঁথার এ তাত্পর্যের কথাই বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় রহিমার কাজটি ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে উল্লেখিত নকশি কাঁথা তৈরির ঐতিহ্যের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।
ঘ) উত্তর : ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের বক্তব্য অনুযায়ী যথাযথ সম্প্রসারণ ঘটাতে পারলে উদ্দীপকের রহিমার অবদান আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের দেশের মানুষ অবসর কাটানোর জন্যই মূলত লোকশিল্পের চর্চা করে। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে এসব শিল্পের সঠিক ভাবে সম্প্রসারণ করে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটানো যেতে পারে। ঠিক যেমনটি হয়েছিল উদ্দীপকের রহিমার ক্ষেত্রে।
উদ্দীপকে রহিমা স্বামীর মৃত্যুর পর উপায় না দেখে সুঁই সুতো হাতে নেয়। নকশি কাঁথায় নিজের জীবন কাহিনি আঁকতে আঁকতে সেও নিজের অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়।
এদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে লোকশিল্পের সম্পর্ক বেশ পুরোনো। যুগ যুগ ধরে এদেশের কুটির শিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্র নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ঐতিহ্য ও সুনাম ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহেরও ব্যবস্থা হয় এ শিল্পের মাধ্যমে। উদ্দীপকের রহিমার কাজটি একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়ায় সে নিজে এবং দেশের অর্থনীতি উপকৃত হয়। তার তৈরি নকশি কাঁথা বৈদেশিক অর্জনের মাধ্যমে তার অভাব ঘোচাতে সাহায্য করেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এভাবেই রহিমা অবদান রাখছে।
২. প্রশ্ন : সেঁজুতির স্কুলে চলছিল বার্ষিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা। সেঁজুতি জমা দেয় একটি নকশি কাঁথা। এ কাঁথায় ফুঁটিয়ে তোলে বর্ষা প্রকৃতি এবং বিরহ কাতর একজন নারীর জীবনগাথা। দর্শনার্থী, বিচারক এবং প্রতিযোগী সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখেন এটি। একজন মন্তব্য লেখেন, আমাদের লোকশিল্প যে সমৃদ্দশালী তা বলে শেষ করার মতো নয়। কিন্তু সময় ও রুচির পরিবর্তনে তা আজ প্রায় ধ্বংসের সম্মুখ। আমাদের সকলের এখনই এর প্রতি নজর দেয়া উচিত। নইলে অচিরেই এ শিল্প ধারাকে আমরা হারাব।
ক) শিল্পগুণ বিচারে আমাদের কুটিরশিল্প কোন শিল্পের মধ্যে পড়ে ?
খ) বর্ষাকালে নকশি কাঁথা তৈরির জন্য উপযুক্ত সময় কেন ?
গ) সেঁজুতির এহেন উদ্যোগ আমাদের লোকশিল্পের যে বিশেষ দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ) উদ্দীপকে লোকশিল্প বাঁচিয়ে রাখার যে তাগিদ অনুভূত হয়েছে তা ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের লেখকের বক্তব্যকে সমর্থন করে কি ? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
২ নং প্রশ্নের উত্তর :
ক) উত্তর : লোকশিল্পের মধ্যে পড়ে।
খ) উত্তর : বর্ষাকালে গ্রামের মেয়েদের ঘর-সংসারের কাজ কম থাকে বলে তা নকশি কাঁথা তৈরির উপযুক্ত সময়।
নকশি কাঁথা আমাদের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। গ্রামের সূচি কর্মে নিপুন নারীরা বর্ষনমুখর দিনের অবসরে এসব শৌখিন কাঁথা সেলাই করে। বর্ষাকালে মেয়েদের সংসারে কাজের চাপ কম থাকে বলেই এটি নকশি কাঁথা তৈরির উপযুক্ত সময়।
গ) উত্তর : সেঁজুতির উদ্যোগ আমাদের লোকশিল্পের নকশি কাঁথার সৌন্দর্য্য ও ঐতিহ্যের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।
বাংলার লোকশিল্পের অন্যতম বৈচিত্র্যপূর্ণ নিদর্শন হলো নকশি কাঁথা।যুগ যুগ ধরে বাঙালি নারীর শিল্প চেতনা নকশি কাঁথার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। নকশি কাঁথায় সাধারণত নারীরা বর্ষার প্রকৃতি এবং বিরহকাতর জীবনগাথাকে তুলে ধরে। এতে করে এ শিল্পের প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
লোকশিল্পের প্রতি ভালবাসাও এর গুরুত্ব অনুধাবনের যে তাগিদ ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে রয়েছে তা উদ্দীপকের সেঁজুতির আচরণে স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের বর্ণনার মতই উদ্দীপকের সেঁজুতি লুপ্ত প্রায় লোকশিল্প নকশি কাঁথার কদর বুঝতে পেরেছে। ফলে স্কুলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় সে নকশি কাঁথা উপস্থাপন করেছে। এতে দেশিয় শিল্প ও ঐতিহ্যের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। তার এ উদ্যোগ মূলত আমাদের লোকশিল্পের নকশি কাঁথার সৌন্দর্য্য ও ঐতিহ্যের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করেছে।
ঘ) উত্তর : উদ্দীপকে লোকশিল্প বাঁচিয়ে রাখার যে তাগিদ অনুভূত হয়েছে, তা ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বর্ণিত লেখকের বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন করে।
আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কথা এসেছে। এখানে লোকশিল্পের অতীত ঐতিহ্যকে স্মরণ করে এর ভবিষত্ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া একে রক্ষা করার তাগিদও এ প্রবন্ধে দেওয়া হয়েছে।
উদ্দীপকে উল্লেখিত মন্তব্যে লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে সেঁজুতি প্রাণের তাগিদ অনুভব করেছে। পঠিত প্রবন্ধেও লোকশিল্প রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
উদ্দীপক ও পঠিত প্রবন্ধের মূল ভাবনা, গ্রামীণ লোকশিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে- আমাদের লোকশিল্পের একটি অতীত ঐতিহ্য ছিল এবং আমরা সচেতনভাবে কাজ করলে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। উদ্দীপকের সেঁজুতি এবং মেলার নকশি কাঁথা দেখে মন্তব্যকারী উভয়েই লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ অবুভব করেছে। যা ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের লেখকের বক্তব্যকেই সমর্থন করে।
নৈর্ব্যতিক :
১. কোনটি মোঘল বাদশাহদের বিলাসের বস্তু ছিল ?
(ক) নকশিকাঁথা (খ) ঢাকাই মসলিন√
(গ) খদ্দরের কাপড় (ঘ) শীতলপাটি
২. মসলিনের কারিগরদের বংশধরেরা আজও কোথায় বসবাস করছে ?
(ক) কুমিল্লা (খ) সিলেট
(গ) পার্বত্য চট্টগ্রাম (ঘ) নারায়ণগঞ্জ√
৩. মসলিনের ঐতিহ্য লালন করছে কোনটি ?
(ক) নকশিকাঁথা (খ) জামদানি শাড়ি√
(গ) টেরা পুতুল (ঘ) শীতল পাটি
৪. কামালের দেয়া উপহারটিকে শিল্পগুণ বিচারে কোন শ্রেণির অন্তর্ভক্ত করা যায় ?
(ক) আধুনিক শিল্প (খ) কুটির শিল্প√
(গ) চারু শিল্প (ঘ) মৃত্ শিল্প
৫. এরূপ উপহার দেয়ার পেছনে কামালের উদ্দশ্যকে ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের আলোকে বলা যায়-
i. অর্থ সাশ্রয় করা
ii. লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা
iii. ঐতিহ্যকে ধরে রাখা
নিচের কোনটি সঠিক উত্তর ?
(ক) i ও ii (খ) i ও iii (গ) ii ও iii√ (ঘ) i, ii ও iii
*** লেকচার এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আবার নতুন লেকচার নিয়ে দেখা হবে তোমাদের সাথে। আল্লাহ্ হাফেজ.............. এখানে ঢু মারতে পার